“নাহ, সব পরিকল্পনা, রুটিন ব্যর্থ! আজকে ৬ টা বিষয় পড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু পড়তে পেরেছি মাত্র ২ টা বিষয়। অন্যদিকে আমার বন্ধু দিনে ৮টা করে বিষয় পড়ে, আর আমি…. । ওতো সিউর A+ পাবে, আমি এই পড়া নিয়ে B পাবো কিনাও সন্দেহ আছে!”
![]() |
হাল ছেড়ে দিও না |
উপর্যুক্ত কথাগুলো আমাদের বাস্তব জীবনের হতাশার একটি সূচনা বিন্দু। আমরা যেমনভাবে আমাদের জীবনকে চাই, জীবন ঠিক সেভাবে চলে না। এটি আমাদের মধ্যে বিষণ্নতা+হতাশা সৃষ্টি করে।
আর এই বিষণ্নতা ও হতাশা আমাদের চলার পথে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।
জীবন কী আপনার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যে, তাকে আপনার কথা মত চলতে হবে! সে তার নিজের গতিতেই চলবে। আর আমাদের সবার এই বিশ্বাস থাকা জরুরী যে, জীবন এখন যেভাবে চলছে, তা খুব ভালো। জীবন আমার জন্য অনেক সহজ। আমি পারবো! কারণ, এই মহাবিশ্বে যে পরিমাণ শক্তি দিয়ে পরিচালিত, ঠিক একই পরিমাণ শক্তি দিয়ে আমরা পরিচালিত হয়।
যদি সূর্য ও চাঁদ তাদের মধ্যে থাকা রাসায়নিক শক্তিকে রূপান্তরিত করে ক্রমাগত আলো দিয়ে পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবো না! আমরা এবং মহাবিশ্ব দুটোই একই পরিবারের অংশ। কেউ কারো থেকে আলাদা নয়। আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা যদি তাদের শক্তি রূপান্তর করে এতকিছু করতে পারে, তাহলে আমরা কেন আমাদের ইচ্ছাশক্তি কে বাস্তবে রূপান্তর করছি না!
শৈশব কাল থেকেই আমাদের একে অন্যের সাথে তুলনা করতে শিখানো হচ্ছে, যা আমাদের জন্য কতটা বিপজ্জনক, তা সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। আপনি নিজেকে অন্য জনের সাথে তুলনা করে বিষণ্নতা ও হতাশা ব্যতীত কিছুই পাবেন না। তুলনা করার বদলে সাপেক্ষে চিন্তা করুন।
মনে করুন, আপনি দিনে ৬ টি বিষয় পড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। আপনাকে এইজন্যে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া পরিবারের কাজ তো আছেই। যদি দেখা যায়, সব মিলিয়ে আপনি কোনভাবে আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী পড়তে পারছেন না; তখন সেটা নিতান্তই আমাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাহলে এইক্ষেত্রে আপনার লক্ষ্য ঠিক রেখে শুধু লক্ষ্যে পৌছানোর পথটা পাল্টাতে হবে। আর আপনি যখন কোন স্বপ্ন/লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা শুরু করবেন, তখন আপনাকে মনে মনে এই কথা বলতে হবে যে, আমি আমার স্বপ্ন/লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম, আমি এতে ব্যর্থ বা সফল উভয় হতে পারি। আমি শুধু চেষ্টা করে যাবো এবং আমার চেষ্টার কোন কমতি থাকবে না।
আর আপনি যদি এই চিন্তা করেন যে, আমি আমার স্বপ্ন/লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম, আমি এতে কখনো ব্যর্থ হবো না, তাহলে আপনি আসলেই সেই লক্ষ্য পুরণে ব্যর্থ হবেন। একটি কথা মনে রাখবেন,
Success comes from experiences and experiences comes from bad experiences.
-Sandeep Maheswari
আপনি কখনো নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। বরং কালকের আপনি এবং আজকের আপনির মধ্যে তুলনা করুন, তাহলে নিজের অগ্রগতি দেখতে পারবেন। সফলতার ক্ষেত্রে কোন মানুষের সাথে যদি আপনার কোন পার্থক্য থেকে থাকে, তাহলে তা শুধুমাত্র সময়ের পার্থক্য ব্যতীত কিছুই নয়।
আমাদের মধ্যে অতীত ধরে বেঁচে থাকার প্রবণতা রয়েছে। অর্থাৎ, অতীতে আপনি একটি কাজে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন, আর এখন সেটি আপনার বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে যে, আপনি আর সেই কাজটি করতে পারবেন না।
মনে করুন, আপনি একটি এবড়োথেবড়ো রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, আর কিছুক্ষণ পরপর হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন, তা সত্ত্বেও আপনি সামনে গিয়ে চলেছেন। কিন্তু সমস্যার কথা হলোঃ এবার আপনি পিছনে মুখ করে সামনের দিকে হাঁটছেন, কারণ আপনি যে আছাড় খেয়েছেন তা নিয়ে আপনার মধ্যে বিষণ্নতা তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায়, আপনি প্রায় প্রত্যেকবারই হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবেন শুধু আপনার অতীতমুখীতার জন্যে।
অতীত থেকে শিক্ষা নিবেন, কিন্তু তা আগলে ধরে রাখবেন না।
একটি শিশুকে মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন, সে যখন হাঁটতে শিখে, তখন বারবার হোঁচট খাওয়া সত্ত্বেও সে হাল ছেড়ে না দিয়ে পুনরায় একই উদ্যমে আবার উঠে দাঁড়ায়! এই শিশুটি আমি, আপনি এবং সবাই ছিলো। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে আমাদের মধ্যে থাকা এই শিশুকে আমরা মেরে ফেলি, যার ফলে কোন ব্যর্থতা দেখলেই হাল ছেড়ে দিই।
একটি শিশুকে কখনো হাল ছেড়ে দিতে দেখেছেন! সে যখন পড়ে যায়, তখন এটা (কেন পড়ে গেলাম) নিয়ে আফসোস করে নাকি পুনরায় দাড়ানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে!
আমাদের অনেকের মধ্যে এই বিশ্বাস থাকে যে, সফল হওয়ার জন্য মানুষের জন্মগত ট্যালেন্ট অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয়। যদি তাই হতো; তাহলে বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস, জ্যাক মা, কেন্টাকি প্রমুখ ব্যক্তিদের সফলতা পেতে এত সময় পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করতে হয়েছে? কেন তারা জন্মের পরপরই সফল হয়ে যাননি?
এসব বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, তাদের মধ্যে শিখার গুণ, ধৈর্য, কঠিন পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভূমিকা রয়েছে। তাই আজই সফলতার ক্ষেত্রে এই জন্মগত ট্যালেন্ট নামক ভ্রান্ত বিশ্বাসের মূল উৎপাঠন করুন।
আপনি আপনার সমস্যাগুলো থেকে অনেক বড়!!
আর বারবার বলছি, হাল ছেড়ে দিবেন না। আপনি যদি দেখেন, আপনি একটি কাজে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন তাহলে সেই সমস্যা নিয়ে চিন্তা করুন যে কেন আপনি বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। এই বিষয় নিয়ে Albert Einstein খুব সুন্দর একটি কথা বলেছেন,
If I had an hour to solve a problem, I’d spend 55 minutes thinking about the problem and 5 minutes thinking about solution.
পরিশেষে Think and Grow Rich বইয়ের লেখক Nepolion Hill এর বলা একটি বিশেষ কথা দিয়ে সমাপ্তির রেখা টানছি।
সাফল্য মানে লেগে থাকার ক্ষমতা, ত্রুটি সংশোধন করে ক্রমাগতভাবে চেষ্টা চালানো, থেমে যাওয়া মানে মৃত্যু।
0 মন্তব্যসমূহ