Ad Code

যে কারণে আপনি বদভ্যাসের শিকলে বন্দি হয়ে আছেন!

বদভ্যাসের শিকলে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিত্যদিন আমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছি! সবাই চায়, নিজের মধ্যে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে; কিন্তু কজনই বা পারে !!
আসুন ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হই আমরা! 



অভ্যাস কিভাবে কাজ করে?

অভ্যাস এমন একটি বিষয়, যা শিরা-উপশিরার মতো আমাদের জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। ভালো অভ্যাস যেমন আমাদের জীবনকে সুগঠিত করে, ঠিক তেমনি খারাপ অভ্যাস অভ্যাস আমাদের জীবনে বিপদ ডেকে আনে। তাই অভ্যাসের কাজ করার ধরণ সম্পর্কে সবারই অবগত হওয়া উচিত। ফলশ্রুতিতে, কেউ যদি একটি কাজে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে যায়, তাহলে তার Conscious Mind তাকে একটি Warning দিবে, “যে তুমি তো এই কাজটা বর্তমানে বেশি পরিমাণে করছো, তুমি বোধহয় ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে যাচ্ছো। ভেবে দেখো, তুমি এই কাজটা যে করছো, এতে তোমার উপকার কী এবং অপকার কী?”। এই একটি Warning হয়তো তাকে খারাপ অভ্যাস গঠন করা থেকে বিরত রাখতে পারে।
প্রত্যেক অভ্যাস একটি চক্র অনুযায়ী কাজ করে। একটি অভ্যাসচক্রের সাধারণত তিনটি অংশ থাকে। এগুলো হলোঃ Trigger(সূত্র), Routine(রুটিন) and Reward(পুরস্কার).
অভ্যাসের চক্রটি একটি উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিচ্ছি,“ একটি ছেলে ইউটিউবে মুভি দেখছে, তাতে হঠাৎ ফুডপান্ডার একটি বিজ্ঞাপন এলো। বিজ্ঞাপনে সে বিভিন্ন লোভনীয় খাবার দেখলো, ‘বার্গার, পিৎজা, চিকেন ব্রোস্ট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি’। এগুলো দেখে তার মুখে লালা চলে এলো। সে দ্রুত ইউটিউব থেকে বের হয়ে ‘ফুডপান্ডা’ অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করে ২টি বার্গার, ১ প্যাকেট ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর ১টি পেপসি অর্ডার করলো। ডেলিভারী ম্যান খাবার নিয়ে আসার পর সে খাবারগুলো খেতে শুরু করলো। মুভিতে দেখতে পেলো, নায়ক শত্রুকে মারছে, এটি দেখে সে নিজের অজান্তেই মুখে কয়েকটি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পুরে দিলো। এদিকে সে দেখলো, নায়ক শত্রুকে কুপোকাত করে ফেলেছে আর আরেকদিকে মজাদার খাবারের স্বাদ দুটোতেই সে খুব খুশি হয়ে গেলো এবং আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি হলো। সে এরপর থেকে মুভি দেখার সময় কিছু খাবার অর্ডার করে নিত।
Trigger(সূত্র)
একটি অভ্যাস প্রথমে সূত্রের মাধ্যমে শুরু হয়। উপরিউক্ত উদাহরণের ক্ষেত্রে; ছেলেটি যখন বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন খাবার দেখলো, তখন তার খাবারের প্রতি লোভ জাগলো, কারণ সে এই খাবার আগেও খেয়েছে। এখানে খাবারের বিজ্ঞাপন একটি সূত্র/ইঙ্গিত/ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। ফলে তার Sub-Conscious Mind এ ‘খাওয়ার’ অভ্যাসের চক্র শুরু হয়।
অর্থাৎ মূল কথা হলো, আমরা যখনি আমাদের অভ্যাস সংশ্লিষ্ট কোন তথ্য ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে মস্তিষ্কে প্রেরণ করি, তখনি অভ্যাসের চাকা ঘুরতে শুরু করে এবং আমরা পরবর্তী ধাপে(রুটিন) অগ্রসর হই।
Routine(রুটিন)
কোন অভ্যাসের সূত্র/ইঙ্গিত/ট্রিগার যখন আমরা পাই, তখন আমাদের Conscious Mind একটি রুটিন অনুসরণ করে। উপরিউক্ত উদাহরণের ক্ষেত্রে; ছেলেটি যখন ইউটিউব থেকে বের হয়ে ‘ফুডপান্ডা’ অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করে খাবার অর্ডার করলো, অর্থাৎ ছেলেটি একটি নিয়ম বা রুটিন অনুসরণ করছে, যাতে সে খাবারটি পায় পরিশেষে একটি Reward পাওয়ার জন্য। এটি হলো প্রকৃতপক্ষে একটি রুটিন, যা আমাদের Conscious Mind দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
Reward(পুরস্কার)
আমরা অভ্যাস চক্রে যেকোন কিছুর সূত্র/ইঙ্গিত/ট্রিগার পেয়ে একটি রুটিন অনুসরণ করি, যাতে শেষে একটি পুরস্কার(Reward) পাই। উপরিউক্ত উদাহরণের ক্ষেত্রে; ছেলেটি মুভির ফাইটিং ও মজাদার খাবারের স্বাদ দুটোতেই সে খুব খুশি হয়ে গেলো এবং আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি হলো। সে এরপর থেকে মুভি দেখার সময় কিছু খাবার অর্ডার করে নিত।
রুটিন অনুসরণের পর আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনগুলো ডোপামিন নিঃসরণ করে। ফলে আমাদের আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই অভ্যাসের চক্র আবার কোন কিছুর সূত্র/ইঙ্গিত/ট্রিগার পেলে শুরু হয়ে যায়। একই অভ্যাস বারবার ট্রিগার>রুটিন>রিওয়ার্ড পুনরাবৃত্তি হলে সেটি খুব শক্তিশালী হয় এবং আমাদের Sub-Conscious Mind এ স্থায়ী হয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার বই ‘The Power Of Habit’ এর লেখক ‘Charles Duhigg’ বলেন, মানুষ কখনো কোন অভ্যাস একেবারে মুছে ফেলতে পারে না, বরং একটি অভ্যাস দিয়ে আরেকটি অভ্যাসকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে। যেমনঃ আমরা দুইবেলা ভাত খাই, এখানে আপনি দুইবেলা খাওয়ার অভ্যাসটাকে মুছে ফেলতে পারবেন না, বরং হয়তো ভাতের বদলে রুটি বা অন্য কিছু খেতে পারেন।
একটি অভ্যাস আবার এক বা একাধিক অভ্যাসের সাথে সংযুক্ত করা যায়। যেমনঃ আমরা অসুস্থ হলে ডাক্তার আমাদের ঔষধ দেন এবং এটি আমাদের খুব দ্রুত আয়ত্ব হয়ে যায়। কারণ, ডাক্তার আমাদের বলেন, ‘ঔষধগুলো খাওয়ার আগে বা পরে খেতে হবে’। আর খাওয়ার অভ্যাস টা আমাদের Sub-Conscious Mind এ আগে থেকেই সংরক্ষণ করা আছে। শুধু ঔষধ খাওয়ার অভ্যাসটি এটার সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়।
তিনি আর জানান, মানুষ কখনো ট্রিগার এবং রিওয়ার্ডকে পরিবর্তন করতে পারে না, কারণ এটি প্রাকৃতিক এবং স্বয়ংক্রিয়। মানুষ শুধু রুটিনকে পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরনো কোন অভ্যাসকে নতুন অভ্যাস দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে পারে। এখন এই রুটিনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনতে হবে। যদি আপনি কোন খারাপ অভ্যাসকে নতুন অভ্যাস দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে চান, তাহলে আপনাকে অনেক ধৈর্য ও ইচ্ছাশক্তির ব্যবহার করতে হবে।
রুটিনে যেভাবে পরিবর্তন আনবেন
মনে করুন, আপনি অনেক জাঙ্কফুড খান। আপনি এটির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত। আপনি চান, এই জাঙ্কফুড খাওয়ার অভ্যাসটি ত্যাগ করতে, কিন্তু করতে পারেন না। কারণ, আপনি যে সেটাকে একেবারে মুছে ফেলতে চান; যা বিজ্ঞানীদের মতে অসম্ভব।
তো আপনি খুঁজে বের করবেন, কোন কারণে ট্রিগার সক্রিয় হয়ে যায়। যেমনঃ খাবারের বিজ্ঞাপন দেখে, কাউকে খেতে দেখে বা কারো খাওয়ার অভিজ্ঞতা শুনলে অথবা মুভি দেখতে বসলে ইত্যাদি।
ট্রিগার সক্রিয় হওয়ার কারণগুলো শনাক্ত করুন, যাতে আপনি অভ্যাসচক্রের রুটিনে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া বুঝতে পারেন।
এবার একটি Why Sheet তৈরি করুন। অর্থাৎ, জাঙ্কফুড খেলে কী কী শারীরিক ক্ষতি হয় এবং কী কী উপকার হয়, তা একটি খালি পৃষ্টা নিয়ে ক্রমান্বয়ে লিখে ফেলুন। যদি সম্ভব হয়, এটির সাথে আবেগকেও সংযুক্ত করুন। যেমনঃ অতিরিক্ত জাঙ্কফুড খেলে আমি মোটা হয়ে যাবো; তখন যদি কোন অনুষ্ঠানে যায়; তখন মানুষ আমাকে দেখে হাসবে; আমার সুন্দর ছবি উঠবে না; আমি কাপড় পড়লে আমাকে বেমানান দেখাবে ইত্যাদি। একটি কথা মনে রাখবেন, Emotion is very powerful. Why Sheet তৈরির পর সেটা আপনার বেড/ডাইনিং/পড়ার রুমে লাগিয়ে নিন। যাতে সবসময় সেটা আপনার চোখে পড়ে।
মস্তিষ্ক সম্পর্কে যতই জানছি, ততই আশ্চর্য হচ্ছি। আপনি যদি নিজেকে বলেন, “ভাই, তোমার দ্বারা এসব হবে না” , তাহলে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে অনেক যুক্তি প্রদর্শন করাবে যে, কেন সম্ভব নয়! আর যদি নিজেকে বলেন, “আরে, আমি তো শক্তি দিয়ে তৈরি, আর শক্তির কোন বিনাশ নেই, অর্থাৎ আমি পারবো; আমি সব করতে পারবো!”, এটা বলার পর আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে বলবে, “ কিরে ভাই, পাগল হয়ে গেলা নাকি! তুমি কী পারবা!”, এরপর আপনি বারবার যদি এই কথাটা বলতে থাকেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে এই যুক্তি প্রদর্শন করাবে যে, কী কারণে আপনি সব করতে পারবেন!
আমরা তো অনেকসময় এটি বলি যে, আমাদের মন আয়নার মতো । একটি বিষয় যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখবেন আমাদের মন আসলেই আয়নার মতো। কিভাবে?
পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায়, আয়না বা দর্পণে আলোকরশ্মি সমান্তরালভাবে আপতিত হয়ে প্রতিফলিত হয়। এখন আলোকরশ্মিগুলোকে চিন্তার সাথে মিলিয়ে নিন। অর্থাৎ, আমরা আমাদের মনে যেই চিন্তাধারা আপতিত করবো, সেই চিন্তাধারাই কিন্তু প্রতিফলিত হয়ে আমাদের জীবনে দিক পরিবর্তন করে দেয়। একটি কথা মনে রাখা উচিত,
“You Life Is A Reflection Of Your Thoughts”
মনে করুন, আপনি টিভি/মোবাইল দেখছেন, তখন জাঙ্কফুডের অভ্যাসটি ট্রিগার হলো। এই ট্রিগার আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। কারণ, এটা নিয়ন্ত্রণ আমাদের মধ্যে থাকা বোকা ভদ্রলোক Sub-Conscious Mind. এখন অভ্যাসের চক্র অনুযায়ী, এটি রুটিন অনুসরণ করবে। এই রুটিন নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মধ্যে থাকা চালাক ভদ্রলোক Conscious Mind.তো এখন আপনি চালাকি করে জাঙ্কফুডের বদলে চিনাবাদাম/কাঠবাদাম/কাজু বাদাম খেতে পারেন। এই বাদামগুলোতে HDL(High Density Lipoprotein) রয়েছে, যা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। শেষে আপনি একই পুরস্কার অর্থাৎ ডোপামিন ক্ষরিত হবে। তখন একবার Why Sheet টা দেখে নিবেন,যাতে আপনি অনুপ্রাণিত হন।
এভাবে টানা ৩০ দিন আপনি যদি শক্ত মানসিকতা, ধৈর্য ও ইচ্ছা নিয়ে কাজ করে যান, তাহলে আপনার Sub-Conscious Mind এ এটি সফলভাবে প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে।
“You habits will determine your future”
------Jack Confield----


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Enjoy this page? Like me on Facebook!)