Ad Code

প্রকৃত জ্ঞানীরা নিজেদের বোকা মনে করে; আর বোকারা নিজেদের জ্ঞানী মনে করে!!

 “True knowledge exists in knowing that you know nothing ”

-----Socrates-----



প্রত্যেক শিশু জন্মের পর ধীরে ধীরে ভাষা শিখে, সেই ভাষাকে ব্যবহারের মাধ্যমে তার মস্তিষ্কে কিছু জ্ঞান সঞ্চিত হয়। কিন্তু এই জ্ঞান যে সীমাবদ্ধ সেটা বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে না পেরে নিজেকে জ্ঞানী ভাবতে শুরু করে। যার ফলে বোকাদের দলে তার নাম উঠে যায়। একজন জ্ঞানী ব্যক্তির আর একজন বোকা ব্যক্তির প্রধান পার্থক্য হলোঃ বোকা ব্যক্তি সবকিছু জানে, কিন্তু জ্ঞানি ব্যক্তি কিছুই জানেন না।
জ্ঞানের পরিসীমা অনেক বিস্তৃত। জ্ঞানের উৎসেরও শেষ নেই। আমরা কোনকিছুর অভিজ্ঞতা অর্জন করে, বই পড়ে, মানুষের কাছ থেকে শুনে, ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে অথবা যেকোন কিছু থেকে বিভিন্ন তথ্য মস্তিষ্কে জমা রেখে ভাবতে শুরু করে দিই, “আরে, আমি তো অনেক কিছু জানি, আমাদের মস্তিষ্কে তো অনেক তথ্যে ভরপুর।”
আমরা আমাদের মস্তিষ্কে থাকা তথ্যের বাইরে চিন্তা করতে পারি না। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝিয়ে দিচ্ছি, বলুন তো, কমলা রংয়ের পৃথিবীর ভুপৃষ্ঠে কী কী আছে?
প্রশ্নটি শুনে বলবেন, আরে কমলা রঙের কোন পৃথিবী আছে নাকি! প্রশ্নটির উত্তর আমি নিজেও জানি না। এখন আপনি যদি বলেন, কমলা রঙের কোন পৃথিবী নেই। তাহলে আপনার কথাকে সত্য হিসেবে কিভাবে মেনে নেবো? হতে পারে, শত শত বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে সেটি আছে অথবা সেটি নাও থাকতে পারে! তো আপনি কোনভাবে বলতে পারলেন না যে, আসলে কমলা রঙের পৃথিবী আছে কি না? কারণ, আপনি এটির ব্যাপারে কিছুই জানেন না, অর্থাৎ এটি সম্পর্কে কোন তথ্য আপনার মস্তিষ্কে নেই। তাহলে কিভাবে আপনি বললেন, আপনি সবই জানেন?
আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো বুঝতে পারি না। কারণ, আমরা নিজেদের বিশ্বাসকে, নিজেদের মধ্যে থাকা তথ্যগুলোকে জিজ্ঞেস করি না। যেমনঃ আমরা জানি, চোখে আলো প্রবেশের ফলে আমরা কোন বস্তু দেখতে পাই; তাহলে কী আলোর কারণে আমাদের চোখ আছে নাকি চোখের কারণে এই আলো আছে? কানের কারণে কী শব্দ আছে নাকি শব্দের কারণে কান আছে? চিন্তার কারনে কী মস্তিষ্ক আছে নাকি মস্তিষ্কের কারনে চিন্তা আছে? হৃদস্পন্দনের কারণে কী আমরা বেঁচে আছি নাকি আমরা বেঁচে থাকার ফলে হৃদস্পন্দন আছে? সূর্যের কারনে কী গ্রহ আছে নাকি গ্রহের কারণে সূর্য আছে? আমরা ভূপৃষ্ঠে আটকে আছি বলে কী অভিকর্ষ আছে নাকি অভিকর্ষ আছে বলে আমরা আটকে আছি? পৃথিবী থাকার কারণে কী আমরা আছি নাকি আমরা আছি বলে পৃথিবী আছে?
আমরা আছি বলে কী মহাবিশ্ব আছে নাকি মহাবিশ্ব থাকার কারণে আমরা আছি?
আমরা এই মহাবিশ্ব এমনকি নিজেদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানি না। তাহলে আপনি কিভাবে বলেন যে, আপনি সব জানেন?
এভাবে অজস্র প্রশ্ন করা যায়। অর্থাৎ, একটি বিষয় আরেকটি বিষয়ের প্রতি নির্ভরশীল এবং এটি আপেক্ষিক। আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের মাঝে জ্ঞান সঞ্চিত হয়। যার ফলে আমাদের মনে হয় যে, আমরা তো আসলে অনেক কিছু জানি, কিন্তু অনেক কিছু জানা আর অনেক কিছু জানি এমনটা মনে হওয়ার মধ্যে কিন্তু আসমান-জমিন তফাৎ রয়েছে।
আরেকটি উদাহরণের মাধ্যমে আমি বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দিতে চাই। মনে করুন, আপনার কাছে দুইটি মেমোরি কার্ড আছে। একটি হলো ২ গিগাবাইট ও অন্যটি ১২৮ গিগাবাইট ধারণক্ষমতার। এখন ২ গিগাবাইট মেমোরি আপনি বিভিন্ন তথ্য দিয়ে পুরোটি ভর্তি করেছেন। আর ১২৮ গিগাবাইট মেমোরিটি মাত্র ৮ গিগাবাইট ভর্তি করেছেন।
এখন আমরা যদি ২ গিগাবাইট মেমোরি কার্ডটির দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখি, তাহলে এটি পুরোটাই ভর্তি। আর যদি ১২৮ গিগাবাইট মেমোরি কার্ডটির দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখি; তাহলে এটিতে তেমন তথ্য নেই, অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ নয়। কিন্তু যদি ১২৮ গিগাবাইট মেমোরি কার্ডটিকে যদি এই ২ গিগাবাইট মেমোরি কার্ডটির দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখি, তাহলে ১২৮ গিগাবাইট মেমোরি কার্ডটিতে অনেক তথ্য আছে। কিন্তু ১২৮ গিগাবাইট মেমোরি কার্ডটির দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখলে এটিতে তেমন তথ্য নেই।
তাহলে উপরের উদাহরণ টাকে যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে একটি বিষয় একেক দৃষ্টিকোণে একেক রকম দেখতে পাই।
এখন আপনি যা বিশ্বাস করেন, যেসব তথ্য আপনার জানা আছে তার সাথে ‘?’ চিহ্ন দিয়ে যদি প্রশ্ন করেন, তাহলে বুঝবেন আপনি আসলে কিছুই জানেন না।
পরিশেষে, এইসব অভিজ্ঞতা, তথ্য, জ্ঞান আমাদের মধ্যেই বিরাজ করে। এখন এই আমি কে প্রশ্ন করি, আমার কী আছে? আমার উত্তর হলো, আমার কিছুই নেই। কারণ, আমি সৃষ্টি হয়েছি মাটি থেকে; আমি নিঃশ্বাস নিই বায়ুমন্ডল থেকে; আমি কথা বলি আমার জানা বিষয় নিয়ে; আমি শক্তি পাই খাবার থেকে,আর এই খাবার সব আসে প্রকৃতি থেকে। অতএব, আমাদের মধ্যে যা কিছু আছে সব সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন। আমাদের কিছুই নেই এর মধ্যে। এখন হয়তো বলবেন, আমার তো অনেক অর্থকড়ি আছে; তাহলে বলি, এই অর্থ উপার্জন করার চিন্তাভাবনা ও কাজ করার যোগ্যতা ও শক্তি আপনি কোথা থেকে পেয়েছেন? নিশ্চয় আপনার শরীর থেকে, আর এই শরীর তো দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা। আচ্ছা কাগজের টাকার নোটের কথা বলি; আপনি এই নোট কোত্থেকে সৃষ্টি করেছেন, নিশ্চয় গাছ থেকে। আর এই গাছ সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। তাহলে, এই টাকার নোট আপনার কিভাবে হলো?
আচ্ছা ধরে নিলাম, আপনি কাগজের টাকা ব্যবহার করেন না। আপনি Credit/Debit Card ব্যবহার করেন। আর এই কার্ড কিন্তু প্লাস্টিক থেকে সৃষ্টি হয়েছে, আর এই প্লাস্টিকও কিন্তু বিভিন্ন পদার্থের মিশ্রণ থেকে তৈরি হয়েছে। আর এই পদার্থগুলো সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন!
তাহলে বলুন, আপনার কী আছে? আমাদের কিছুই যেহেতু নেই, তাহলে সেখানে কিভাবে আমরা বলতে পারি আমরা জ্ঞানী? এইজন্যে দেখবেন, প্রকৃতপক্ষে যাদের আমরা জ্ঞানী হিসেবে চিনি, তারা খুবই বিনয়ী হন। তাদের অহংকারের লেশমাত্র থাকে না। কারণ, তারা জানে যে; তাদের কিছুই নেই, তাহলে তারা কী নিয়ে অহংকার করবে!
আমরা যদি আমাদের পুরো জীবন উৎসর্গ করে দিই, তাহলেও আমরা জ্ঞানের ১% ও জানতে পারবো না। কারণ, এটি অসংজ্ঞায়িত।
You can increase your knowledge by asking yourself questions.
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
“যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কখনো সমান হয় না”
“True wisdom comes to each of us when we realize how little we understand about life, ourselves and the world around us.”
---------Socrates-------

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Enjoy this page? Like me on Facebook!)